ফুটবল ময়দান থেকে জুতো সেলাই শিখে জাপানি ফুটবলার এখন পেশাদারী ব্যবসায়ী !
নিউজ ডেস্ক/ত্রিপুরা পাবলিক ওপিনিওন- নামটা রুইজি সুয়েকা ! সালটা ২০০৯ । মোহনবাগানের হাত ধরে ভারতে খেলে যাওয়া জাপানিদের মধ্যে অন্যতম সেরা ফুটবলার।
মোহনবাগানে
খেলার সময় হঠাৎ একদিন তাঁর বুট ছিড়ে যায়।জাপানি রীতি অনুযায়ী বুটটা ফেলে
দিলেও, প্রিয় বুটের জন্য মনে মনে একটু দুঃখ হয়। তখন মোহনবাগানের একজন মালি
তাকে বলেন,বুটটা আরও কিছু দিন আপনি ব্যবহার করতে পারেন।
তখন সুয়েকার
বুট জোড়া নিয়ে ময়দানে এক মুচির কাছে যান সেই মালি, কৌতূহল বশতঃ সুয়েকাও
যান মালির সাথে।কেননা,জাপানের মতো উন্নতশীল দেশে জুতো সেলাই করে পরার রীতি
নেই।
কিন্তু,সুয়েকা অবাক হয়ে যান তার বুট একজন সামান্য রাস্তার ধারে বসে
থাকা এক মুচি, বিনা মেশিনে কি অপূর্ব সুন্দর ভাবে তার বুটটা সেলাই করে
খেলার উপযুক্ত করে দিলো।
তখন সুয়েকা সময় পেলেই ওই মুচির কাছে বুট সেলাই
শিখতেন (যদিও শিক্ষিত ভারতীয়ের কাছে এটা অপমানজনক পেশা।) এবং অবসর পেলেই
তার কাছে ছুটে যেতেন। কিন্তু,ডাক আসে ডেম্পোর হয়ে খেলার জন্য। চলে যান গোয়া। ইস্টবেঙ্গলের হাত ধরে ২০১৪ সালে আবার ফেরা কলকাতায়।
আবার শুরু জুতো সেলাইয়ের কাজ। তারপর হয়ে ওঠেন অগৌরবের,তুচ্ছ কাজের কারিগর ‘পারদর্শী মুচি’!
শেষ বারের মতো পুনে এফ সি তে খেলে পাড়ি জমান জাপানে।
সেখানে গিয়ে তিনি জুতো সারাইয়ের কাজ গর্বের সাথে পেশা হিসাবে নেন।
এরপর জাপানি প্রযুক্তি ব্যবহার করে, মেশিনের সাহায্যে জুতো তৈরির কারখানা খোলেন।
সাথে সাথে ভারতবর্ষ তথা কলকাতা থেকে শিখে যাওয়া বুট সারাইয়ের কাজও অবসরে করতে থাকেন।
কেউ কোনো ছেড়া বুট ফেলে দিলে, সেই বুট নিজ হাতে সেলাই করে জর্ডন,কম্বোডিয়া,আফ্রিকার মতো গরিব দেশের শিশুদের হাতে তুলে দেন। সত্যি! কি অবাক করা ব্যাপার না।
যেখানে
আমাদের দেশের মানুষেরা জুতে সেলাইকে নিম্ন শ্রেনীর মানুষের কাজ বলে মনে
করে,এমন কি শিক্ষিত মানুষেরা মুচির সামনে রাখা বাক্সে পা তুলে দিয়ে বুট
পালিশ করিয়ে তাঁদের কাজকে সমাজের বুকে তুচ্ছ আখ্যা দিয়ে, অবজ্ঞা ভরে দু
টাকা ছুঁড়ে দেয়,সেই বুট সেলাইকেই জীবনের রুজ-রুটির রাস্তা বানিয়ে নিলো একজন
জাপানি। এমনকি ভারতের বিভিন্ন ক্লাবে খেলার সুবাদে, তাদের সাথে
যোগাযোগের মাধ্যমে ভারতের গরিব খেলোয়াড়দের হাতে, নিজের হাতে সেলাই করা বুট
তুলে দিতে চান সুয়েকা।