মিশন ইন্দ্রধনুস। উদয়পুরে একদিনের কর্মশালা।।


গোমতি জেলা মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের উদ্যোগ  উদয়পুরে একদিনের কর্মশালা।
সোমেন সেন উদয়পুর: 
গোমতী জেলা মু্খ্য স্বাস্থ্য আধিকারিকের
উদ্যোগে রবিবার মিশন ইন্দ্রধনুস ও জেলা স্বাস্থ্য ইস্যুতে  মিডিয়া ওয়ার্কশপ অনুষ্ঠিত হয়। জেলা স্বাস্থ্য অধিকর্তার তরফ থেকে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে আগামী ৭ই আগস্ট থেকে গোমতী জেলায় চালু হতে যাচ্ছে
ইনটেনসিফায়েড মিশন ইন্দ্রধনুষের পঞ্চম পর্ব। গর্ভবতী মা এবং শূন্য থেকে পাঁচ বছর বয়সের শিশুদেরকে টিকা দেওয়ার জন্য চালু হতে যাচ্ছে মিশন ইন্দ্রধনুষ। বিশেষ করে যে সব গর্ভবতী
মা এবং শিশুরা কোভিড বা যে কোন কারনে টিকা দিতে পারে নি তাদের প্রত্যেককে টিকা দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন।
উদয়পুর বিজ্ঞান কেন্দ্রের প্রেক্ষাগৃহে আয়োজিত মিডিয়া প্রতিনিধিদের সঙ্গে এক মত বিনিময় সভায় গোমতী জেলার টিকাকরণ আধিকারিক ডাঃ চিরঞ্জিত নোয়াতিয়া জানান, কোন শিশু একটি টিকা থেকেও যদি বাদ গিয়ে থাকে তাহলেও মিশন ইন্দ্রধনুষের আওতায় ওইসব শিশুকে টিকা দেওয়া হবে। গোমতী জেলার স্বাস্থ্য প্রশাসন মোট ২৭০ জন গর্ভবতী মা এবং ১৮৫৮ জন শিশুকে টিকাকরণের জন্য চিহ্নিত করেছে। এর মধ্যে ২ বছর পর্যন্ত শিশুর সংখ্যা ১৩০৭ জন এবং ২ থেকে ৫ বছর বয়সের শিশুর সংখ্যা হল ৫৫১ জন। 
এবারের আইএমআইএর আরও একটি বিশেষত্ব হল ২০২৩ সালের ডিসেম্বর মাসের মধ্যে ভারত থেকে হাম এবং রুবেলা নির্মূল করার চলমান উদ্যোগ ও কাজগুলিকে আরও বেশী গতি দেওয়া, উৎসাহিত করা। যাতে করে প্রতিটি গ্রামে ৯৫ শতাংশের বেশি শিশুকে টিকাকরন
করানো যায়। কিন্তু জেলা আধিকারিকরা প্রত্যয় ব্যক্ত করে বলেন ৯৫ নয় গোমতী জেলায় ১০০ শতাংশ অর্থাৎ প্রতিটি শিশুকে টিকাদানের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। মুখ্য স্বাস্থ্য আধিকারিক ডাঃ কমল রিয়াং জানান, মোট তিনটি দফায় গোমতী জেলায় মিশন ইন্দ্রধনুষের আওতাধীন টিকাকরণ করানো হবে। প্রথম দফা হবে ৭ থেকে ১২ই আগস্ট, দ্বিতীয় দফা ১১ থেকে ১৬ সেপ্টেম্বর এবং সর্বশেষটি হবে ৯ থেকে ১৪ই আগস্ট। গোমতী জেলায় ১০০ শতাংশ টিকাকরণ করানোর জন্য স্বাস্থ্য প্রশাসন এবার বিভিন্ন ব্লকে উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা, দুর্গম এলাকাগুলিকেও চিহ্নিত করা হয়েছে বলে জানান। পর্যাপ্ত পরিমাণে সবগুলি ভ্যাকসিনই মজুদ রয়েছে বলে টিকা করণ আধিকারিক জানান। সব ভ্যাকসিনই একেবারে নিরাপদ। স্বাস্থ্য দপ্তর শীততাপ নিয়ন্ত্রিত সিস্টেমের মাধ্যমে ভ্যাকসিনকে কিভাবে সংরক্ষিত রাখেও তারও প্রদর্শন করা হয়।
রবিবার মত বিনিময় সভায় জেলার তিন মহকুমার মহকুমা চিকিৎসা আধিকারিক, গোমতী জেলার মেডিক্যাল সুপার ও শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ অভিজিৎ দত্ত, জেলা পরিবার কল্যাণ
আধিকারিক ডাঃ অর্জুন সাহা, জেলা জনস্বাস্থ্য নজরদারী আধিকারিক ডাঃ শৌমিক চক্রবর্তী, ইউনিসেফের কনসালটেন্ট ডঃ গৌরভ বর্মা এবং জেলা প্রোগ্রাম ম্যানেজার রনময় দেব প্রমুখ
উপস্থিত ছিলেন। শিশুকে নিশ্চিন্তে টিকা দেওয়ার জন্য মুখ্য স্বাস্থ্য অধিকারিক ডাঃ কমল রিয়াং অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি বলেন রোগ প্রতিরোধে কোন যাদু-টোনা বা ঝাঁড়ফোক কাজ করে না। টিকা করণ ই হল রোগ প্রতিরোধের উপায়।
গোমতী জেলায় নিরাপদ টিকা ও নিরাপদ টিকাকরণ কর্মসূচীর আওতায় সরকারীভাবে যে টিকাগুলি দেওয়া হয় তা একশ শতাংশ নিরাপদ। বর্তমানে সরকারীভাবে গর্ভবতী মা ও শিশুকে
টিকা দেওয়া হয়ে থাকে। মারন ও মারাতুক সংক্রামক রোগ থেকে রক্ষা করার জন্য গর্ভাবস্থায় একটি টিকা ও শিশুকে মোট ১১টি টিকা দেওয়া হয়ে থাকে। গোমতী জেলা নিরাপদ টিকা ও নিরাপদ টিকা করনকে সর্বোচ্চ প্রাধ্যান্য দিয়ে আসছে। কিন্তু এবার মিশন ইন্দ্রধনুষকে কেন্দ্র করে জেলার পক্ষ থেকে আরও বেশি জোর দেওয়া হচ্ছে। অত্যন্ত সংবেদনশীল পদ্ধতি অনুসরণের মাধ্যমে প্রতিটি টিকার শিশিকে কিভাবে অত্যন্ত নিরাপদভাবে রাখা হয় তার এক প্রত্যক্ষ প্রদর্শনী আজ সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরা হয়।
কোন টিকার শিশিকে কত তাপমাত্রায় রাখা হয় তারও ব্যাখ্যা দেন স্বাস্থ্য আধিকারিকরা।
গোমতী জেলা হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ অভিজিৎ দত্ত জানান প্রতিটি টিকার শিশিকে যে প্লাস ২ থেকে প্লাস ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রার মধ্যে রাখা হয়। উৎপাদন কেন্দ্র থেকে
একেবারে শিশুকে টিকা দেওয়া পর্যন্ত সব ভ্যাকসিনকে সর্বত্র সমান তাপমাত্রায় বজায় রাখা হয়। যাতে প্রতিটি টিকা সুরক্ষিত থাকে এবং এর গুনমান বজায় থাকে। শিশু বিশেষজ্ঞ ডাঃ দত্ত
বলেন প্রতিদিন অন্তত দুবার করে সঠিক তাপমাত্রা ও ভ্যাক্সিনের গায়ে মনিটর গুলি পরীক্ষা করে দেখা হয়। জেলা থেকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য কেন্দ্র পর্যন্ত সব পর্যায়ে দেখা হয়। এমনকি ছুটির
দিনেও এটা বজায় থাকে বলে ডাঃ দত্ত জানান। জেলা সারভাইলেন্স আধিকারিক ডাঃ শৌমিক চক্রবর্তী জানান, টিকা দেওয়ার জন্য সমস্ত
এমপি ডব্লিও ও কমিউনিটি হেলথ আধিকারিকরা সুদক্ষ। কোন টিকাকে কি পদ্ধতিতে এবং মাত্রায় দিতে হবে এটা উনারা ভালো করে জানেন ও দক্ষতার সঙ্গে করে আসছেন। সুতরাং টিকাকরন প্রক্রিয়াও সম্পূর্ণ নিরাপদ টিকা দেওয়ার পর জ্বর বা হালকা ব্যাথা বা সামান্য ফুলে যাওয়া বা টিকাস্থানে লালচে ভাবের ঘটনা খুবি স্বাভাবিক বিষয়। প্রতিষেধক কাজ করার একটা লক্ষন বলা যেতে পারে। টিকার মাধ্যমে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বেড়ে যায়। নিরাপদ টিকাদানের জন্য জেলার সব স্বাস্থ্য আধিকারিক ও কর্মীরা সদা সক্রিয় ও সচেতন। ফরিয়াদ প্রতিনিধির প্রশ্নের জবাবে  ড: শৌমিক চক্রবর্তী জানান এন্টি স্নেইক ভেনাম ও রেবিপর (কুকুরের কামড়ে প্রতিষেধক) জাতীয় ভ্যাকসিন পর্যাপ্ত পরিমাণ রয়েছে। এদিন সংবাদ মাধ্যমের সঙ্গে একদিনের মতবিনিময় সভা ও জেলা স্বাস্থ্য বিষয়ে খোলামেলা আলোচনা করা হয়। এবং এই আলোচনায় গুরুত্বপূর্ণ বিভিন্ন তথ্য উঠে আসে গোমতী জেলা স্বাস্থ্য বিষয়ক মিডিয়া রিপোর্টিং এ কার্যকরী হতে পারে। এদিনের কর্মশালায় গোমতী জেলা সংবাদ মাধ্যমের পক্ষ থেকে প্রবীণ সাংবাদিক প্রানময় সাহা ও  অপুরাম সরকার বক্তব্য রাখেন।।

আরো পড়ুন