গ্রামীণ স্তরে সমস্যা সমাধানে জনপ্রতিনিধিদের পথ দেখাচ্ছেন সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক।।

ত্রিপুরা পাবলিক ওপিনিয়ন রিপোর্টার:

কেন্দ্রীয় প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় ১ লক্ষ ৫ হাজার ঘর পাবে রাজ্যের গ্রামীণ ও শহরের মানুষ। দল রং নির্বিশেষে একমাত্র আর্থিক মানদন্ড এবং প্রকল্পের নির্ধারিত  নিয়ম মেনে প্রকৃত প্রাপকদের পাকা বাড়ি নির্মাণ করে দেবে সরকার। ব্লক ভিত্তিক পর্যালোচনা সভায় এমপি প্রতিমা ভৌমিক দেশের প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী রাজীব গান্ধীর বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন একসময় কেন্দ্র থেকে যখন এক টাকা পাঠাত রাজ্যের জনগণের হাতে মাত্র ১৫ পয়সা এসে পৌছাতো। এখন ২০২০ সালে এসে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী যখন ডাইরেক্ট বেনিফিশিয়ারিদের হাতে টাকা পৌঁছাচ্ছেন তখন ১০০ টাকা পাঠালে তা ১০০ টাকাই হাতে পাচ্ছেন সাধারণ মানুষ।  তিনি বলেন এই সরকার সচিবালয় বসে কাজ করে না জনগণের দরজায় পৌঁছে মানুষের সমস্যা সমাধানের চেষ্টা করে। এদিন টেপানিয়া ব্লকে উপস্থিত জন প্রতিনিধি বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিক এবং সাধারণ মানুষের সামনে উল্লেখ করেন গতবছর সরকারের একটা স্লোগান ছিল বনায়ন। ফলের গাছ কিংবা ফুলের গাছ বা অন্যান্য যে কোন গাছ। তিনি বলেন গত বছর গোমতী জেলায় টেপানিয়া ব্লক সহ একই সময়ে এক মিনিটের মধ্যে ছয় হাজার চারা গাছ রোপণ করা হয়। এ বছরের স্লোগান আত্ননির্ভর ভারত। অর্থাৎ প্রত্যেক ব্যক্তিকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে তোলা। জনপ্রতিনিধিরা আর্থিকভাবে দুর্বল ব্যক্তিদের পৃথক পৃথক ভাবে চিহ্নিত করে তাদেরকে স্বনির্ভর করে তোলার উদ্যোগ নেবেন। ব্যক্তি স্বয়ংসম্পূর্ণ হলে দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ' হবে এটাই স্লোগান। এটাই সরকারের সংকল্প। তিনি আরও উল্লেখ করেন বর্তমান করোনা সংকট কালে সারা বিশ্ব আর্থিক সংকট থেকে উত্তরণের পথ খুঁজছে। আমাদের দেশের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তিনি উদ্যোগ নিয়েছেন গ্রামীণ অর্থনীতিকে চাঙ্গা করার। তিনি বলেন এদেশের অর্থনীতি কৃষিভিত্তিক অর্থনীতি। তাই গ্রামীণ অর্থনীতিকে সুদৃঢ় করতে হবে। সাধারণ মানুষের সমস্যার কথা চিন্তা করে লকডাউন চলাকালে পঞ্চাশ হাজার দরিদ্র পরিবারকে মুখ্যমন্ত্রী বিপ্লব কুমার দেবের উদ্যোগে মুখ্যমন্ত্রী ত্রাণ তহবিল থেকে এক হাজার টাকা করে ৫ কোটি টাকা প্রদান করা হয়েছে। সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক বলেন তবে অনেকেই এই অর্থ পাননি ব্যাংকে আধার লিঙ্কের সমস্যার জন্য হয়তো টাকা ঢুকতে সমস্যা হচ্ছে । তিনি বলেন স্বাধীনতার ৭৩ বছর পর দেশে জল বিদ্যুৎ মৎস্য ক্ষেত্রে পৃথক মন্ত্রণালয় তৈরি করা হয়েছে। এর লক্ষ্য হচ্ছে সাধারণ মানুষ যেন সহজেই সুবিধা পান। জল বিদ্যুৎ পরিষেবায় যেন কোন প্রকার ব্যাঘাত না ঘটে। এদিন পর্যালোচনা বৈঠকে উপস্থিত প্রতিনিধিরা জানান গকুলপুর পূর্ব গকুলপুর ছাতারিয়া হদ্রা বগাবাসা পানীয় জলের অভাবে দুর্ভোগ পোহাতে হয়। সাংসদ বলেন প্রত্যেক পঞ্চায়েতের প্রধান জলের সমস্যা দূর করতে দপ্তরের  আধিকারিকদের নিয়ে তিন থেকে চারটি ওয়ার্ড করে পর্যাক্রমে আলোচনা সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ যাতে নেওয়া হয়। মনে রাখতে হবে আমরা যেন প্রবলেম ক্রিয়েট না করে সলিউশনের জন্য চেষ্টা করি। এবং যে যে পঞ্চায়েত এলাকায় জেলা পরিষদ পঞ্চায়েত ও সমিতির প্রতিনিধি রয়েছেন তাদেরকে উন্নয়নমূলক কর্মসূচিতে যুক্ত করার নির্দেশ দেন। তবে সাংসদ এদিন স্বীকার করে নেন বিদ্যুৎ দপ্তরের লোকবল এবং যানবাহনের সমস্যা রয়েছে। কিন্তু বর্ষাকালে বিদ্যুৎ সমস্যা থেকে নিস্তার পেতে শুধু দুর্গাপূজার সময় গাছ কাটলে চলবে না সারাবছর বিদ্যুৎ পরিবাহী তারের উপরে গাছ বড় হলে তা কাটার ব্যবস্থা করতে হবে। তা না করতে পারলে একদিকে যথাসময়ে কাজ করলে যা ৫ টাকা ব্যয় হতো সঠিক সময়ে পদক্ষেপ না নেওয়ার ফলে ঝড়-তুফানে গাছ পড়ে তাপ ১৫ টাকা ক্ষতি হয় অর্থাৎ তিন গুণ। তারচেয়েও বড় কথা হলো জনগণের সমস্যা বেড়ে যায়।তিনি বলেন বিগত বছরগুলিতে অনেক বেনিফিসিয়ারিরা ন্যায্য পাওনা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। এখন আমাদের কাজ হচ্ছে ওই বঞ্চিত মানুষ গুলি কে চিহ্নিত করে তাদেরকে সরকারি নানাবিধ সুযোগ-সুবিধা পাইয়ে দেওয়া। এই বিষয়ে মন্ত্রী বিধায়করা বিভিন্ন দপ্তরের আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলে চেষ্টা করছেন কীভাবে সাধারণ মানুষের হাতে বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধা আরো সহজে পৌঁছে দেওয়া যায়। টেপানিয়া ব্লক ভিত্তিক পর্যালোচনা বৈঠকে টেপানিয়া ব্লকের বিডিও প্রণয় দেবনাথ বিগত বছরে ব্লকের বিভিন্ন উন্নয়নমূলক কর্মসূচির কথা তুলে ধরেন। সেইসঙ্গে যে যে ক্ষেত্রে লক্ষ্যমাত্রা পূরণ করা যায়নি বা সমস্যা কি কি সেগুলি এমপির সামনে তুলে ধরেন। এদিনের পর্যালোচনা সভায় ফিশারি, পিগারি, বায়োফ্লক এবং অর্থকরী ভেষজ বা ফলের গাছ লাগিয়ে উপার্জন করা যেমন বয়ড়া হরিতকী আমলকি কলা চাষ করার উপর গুরুত্বারোপ করা হয়। এবং এই দিন টেপানিয়া ব্লক ভিত্তিক পর্যালোচনা সভায় হটিকালচার, প্রাণিসম্পদ, ফিশারি দফতরের মাধ্যমে বিভিন্ন বেনিফিশিয়ারি প্রকল্পের সুবিধাগুলি নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করেন আধিকারিকরা। পশুপালন, মাছ চাষ, ফল চাষের মাধ্যমে লাভজনক দিকটি তুলে ধরার চেষ্টা করেন সংশ্লিষ্ট দপ্তরের আধিকারিকরা এবং সে সঙ্গে সরকারি সহায়তা বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়। লক্ষণীয় বিষয় হচ্ছে এদিন ব্লক ভিত্তিক পর্যালোচনা সভায় সাংসদ প্রতিমা ভৌমিক প্রত্যেকের কথা গুরুত্ব দিয়ে শুনেন এবং আগামী দিনে সমস্যাগুলি কিভাবে দূর করা যায় তার দিক নির্দেশ দেন। তিনি বলেন আমাদের সমস্যা সমাধানের জন্য কাজ করতে হবে দৃঢ়তার সঙ্গে। উল্লেখ্য কাকড়াবনের পর টেপানিয়া সমষ্টি উন্নয়ন ব্লক সহ অন্যান্য ব্লকে পর্যায়ক্রমে ব্লক ভিত্তিক পর্যালোচনা সভায় উপস্থিত থাকছেন। জেলা পরিষদ, পঞ্চায়েত সমিতি এবং পঞ্চায়েতের জনপ্রতিনিধির কাছ থেকে কাজ করতে কি কি সমস্যা হচ্ছে সেই সকল সমস্যার কথা শুনছেন। বিগত দিনে সাংসদকে এভাবে ব্লকে ব্লকে ঘুরতে দেখা যায়নি।এদিন ব্লক ভিত্তিক পর্যালোচনা সভায় সভাপতিত্ব করেন গোমতী জেলা সভাপতি স্বপন অধিকারী। উপস্থিত ছিলেন বাগমা কেন্দ্রের বিধায়ক রাম পদ জমাতিয়া, গোমতী জেলা পরিষদের সহ-সভাপতি দেবল দেবরায়, গোমতী জেলা পরিষদের সদস্য টিটন পাল, বিজেপি গোমতী জেলা সভাপতি অভিষেক দেবরায়, এডিশনাল সিইও কিরীট মোহন সরকার সহ বিভিন্ন দপ্তরের অন্যান্য আধিকারিকরা। এখন দেখার বিষয় হচ্ছে এ ধরনের পর্যালোচনা বৈঠকের পর জনপ্রতিনিধি ও সরকারি আধিকারিক বাবুরা পঞ্চায়েত এলাকায় সাধারণ মানুষের সমস্যার সমাধান করতে কতটা পারদর্শীতা দেখান সেটাই প্রশ্ন।

আরো পড়ুন